ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে আসার পর সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য মোবাইল ফোনই ভরসা ছিলো. প্রতি সপ্তাহে একবার করে এক সাথে হবার কথা থাকলেও এত স্পৃহা কারো বেশি দিন টেকেনি . এরই মাঝে 'ফেসবুক' আমদের কে সশরীরে মুলাকাত করার বদলে ভারচুয়াল যোগাযোগের দরজা খুলে দেয়, সবাই ফেসবুক এ আসক্ত হয়ে পরলাম , সবার সাথে মেইল আদান প্রদান অথবা যে কোনো সময় ছোট বার্তা আদান প্রদান নিজের তোলা ছবি নিয়ে মন্তব্য আমাদের যোগাযোগের নতুন মাত্রা এনে দেয় , কাছে না থেকেও সবার অবস্থা জেনে জেতাম যে কোনো সময় .
মাঝে মাঝে ইন্টার নেট সংযোগ না থাকলে , সবার কাছ থেকে যতনা ছিন্ন হতাম তার চেয়ে বেশি ছিন্ন হয়ে যেতাম ফেসবুকের ওয়েব সাইট ডাউন হয়ে গেলে . এই ভার্চুয়াল সংস্কৃততে অভ্যস্ত হয়ে পরার পরিনতি ভালো নয় - এই শংকা মনে প্রায় কাজ করতো . আজ এই শংকা সত্যি হয়েছে ,ভালো মতই টের পাচ্ছি এর পরিনতি, কারণ গতকাল(২৯শে মে) স্বন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশে ফেসবুক এর সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার.সুত্র
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সামাজিক অবক্ষয় , ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত - কিন্তু এই কারণ গুলোর বাইরে দুই নেত্রীর ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ, ফেসবুক বন্ধ করতে সরকার কে বেশি আগ্রহী করেছে বলে আমার মনে হয়েছে .
বেশ কয়েকদিন ধরে ফেসবুক নানা ভাবে বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে - মহানবী(স:)কে নিয়ে কার্টুন, ফেসবুক প্রফাইলএ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা , এসব কারণে পাকিস্তান সরকারও তাদের দেশে এই জনপ্রিয় সামাজিক সাইটটিকে বন্ধ রেখেছে. যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারনকে মুখ্য দেখিয়ে ফেসবুক বন্ধ রাখতে হয় তাহলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিলো আরো আগেই এ ব্যপারে উদ্যোগ নেয়া . রাজনৈতিক নেতাদের(এই খানে পড়তে হবে -নেত্রীদের) ব্যঙ্গাত্মক চিত্র প্রকাশের পর সরকারের চোখ ফুটলো কারণ তাদেরতো "মান -সম্মান" আছে , কিন্তু ফেসবুকে তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সেটাতো আর সরকারী মিডিয়াতে আসেনা, তাই ফেসবুক বন্ধ করে দেয়াকেই সমাধান মনে করেছেন .
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, উইকিপিডিয়ায় আমাদের প্রিয় নবীর ছবি দেওয়া আছে(রেফারেন্স লিঙ্ক দিয়ে ওই পেজের হিট বাড়াতে চাচ্ছিনা) যা ধর্মীয় ভাবে নিষেধ, অথচ তখন কোনো মুসলিম প্রধান সরকার এর প্রতিবাদ করেন না , ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত লাগেনা. এমনি আরও লাখো ওয়েব সাইট আছে যারা সুকৌশলে বিভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে, এই সব ব্লাসফেমীদের নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই.
বাংলাদেশে ফেসবুক এর ব্যবহার কারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ. চার লাখই যে ফেসবুকের অপব্যবহার করছে- তা অবশ্যই না ,গুটি কয়েক উঠতি বয়সের বেয়াদবের জন্য পুরো চার লাখের একটা বিশাল সংখ্যাকে ভোগান্তিতে রাখা হয়েছে . বর্তমান সরকারের একটি জনপ্রিয় উদ্যোগ "ডিজিটাল বাংলাদেশ". বাংলদেশ সরকার যদি তাদের এই 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর ধারণার বাস্তবিক রূপ দেখতে চান , তাহলে ফেসবুকের মতো কোনো ওয়েব সাইট বাঁধা হবার মতো যোগ্যতা রাখেনা. তাই সাময়িক বন্ধের এই নাটকের শেষ করা হোক.
পাকিস্তানের আদালত ফেসবুক বন্ধের আদেশ আগামীকাল বাতিল করবে.
ফেসবুকে আমার লগ ইন করার জন্য যে মেইল একাউন্ট দেয়া, সেখানে প্রায় ত্রিশটার মতো নোটিফিকেশন লিঙ্ক জমা পরে আছে, ক্লিক হবার অপেক্ষায়. দেখি প্রক্সি সার্ভার হয়ে 'ঢোকা' যায় কিনা..
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন