আমাদের প্রতিবেশী দেশে একজন অবিসংবাদিত নেত্রী রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন গৃহবন্দী ছিলেন। সামরিক জান্তা তাকে দীর্ঘদিন অন্তরীণ করে রেখেছিলো। আং সান সুকির কথা বলছি। এই রাজনৈতিক নেত্রীও একজন মহান নেতা আং সানের কন্যা। আং সানকে ধরা হয় আধুনিক বার্মার জাতির পিতা হিসেবে। ২০১০ সালে ঘর থেকে বের হয়ার পুর্বে, প্রায় ২১ বছরের বেশী সময় তিনি নিজ গৃহে বন্দি থেকেছেন।
এবার নজর দেই আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটের দিকে। ৫ জানুয়ারী, ২০১৫তে সমাবেশ করতে না দেয়ায় দেশে টানা অবরোধ আর জ্বালাও পোড়াও চলছে। এক কালের প্রতাপশালী নেত্রী খালেদা জিয়া নিজ দলের গুলশান কার্যালয়ে নিজের দিনানিপাত করে যাচ্ছেন। তিনিও সু কির মতো বর্তমানে 'গৃহবন্দি' অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার দাবী প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তার দলের কর্মীদের চেয়ে সাধারণ মানুষের নামে-সংখ্যায় হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ভারী হচ্ছে।
তিনি আং সান সু কির মতো ফোবস ম্যাগাজিনে ২০১৪ সালের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। তাতে কি, তিনি বাংলাদেশের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থিত দলের কান্ডারি। এই সরকার তাকে কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছে। উড়ো খবরে জেনেছি[রেফারেন্স নেই] যে, তাকে সমাবেশ করতে দিলে বেনজীর ভুট্টোর মতো মেরে ফেলা হবে, তাই সরকার তাকে নিরাপত্তার নামে বন্দি করে রেখেছেন।
ধরে নিলাম, তিনি নিজেকে ইচ্ছা করেই গৃহে অন্তরীণ রেখেছেন, নিজেকে নিরাপদে রেখেছেন। বার্মার সামরিক জান্তাদের সাথে আমাদের নির্বাচিত [!] সরকারের মিল খুজে পাচ্ছি। রাজনৈতিক স্বার্থে একজন রাজনৈতিক নেত্রীকে বন্দি রাখা হচ্ছে। কিন্তু বার্মার সামরিক জান্তাদের আমি আমার দেশের সবচেয়ে বেশী বয়েসি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে গঠিত সরকার এর চেয়ে বেশী সভ্য মনে করছি। কারণ তার কখনো আং সান সু কির রান্নাঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়নি। খাবারের উপর নিষেধাজ্ঞা আনেনি। তিনি তার মতই খেয়ে পরে বেঁচে ছিলেন। আমাদের সরকার নির্লজ্জের মতো এই কাজটি করেছেন। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। খালেদা জিয়া এখন আর সংসদের অংশ নন। তাই তাকে বোধ করি সরকার আগের মতো ভয় করেনা। কিন্তু তাই বলে তাকে খাবার আর পানি না দিয়ে কষ্ট দেওয়া সরকারের ঠিক হয়নি।
যুগান্তর ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ |
সরকার নিজেকে অনেক সহনশীল আর সভ্য দাবী করেনি, কিন্তু এহেন কাজ কোন সভ্য কাজ নয়। আমি এই ধরনের ছেচরামীর দেখে অবাক হইনি, কিন্তু এটা আশা করিনি। যাদের মাথা থেকে এই ধরনের আইডিয়া আসে, তারা অসুস্থ। বলতে দ্বিধা নেই, এই ধরনের অসুস্থ লোকদের নিয়ে বড় কিছু করা যায় না। ধীক্কার জানাই তাদের যারা খাবার আর পানি নিয়ে রাজনীতি করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন